Breaking News

কওমী মাদরাসা সনদের স্বীকৃতি বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে

কওমী মাদরাসা সনদের স্বীকৃতি বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে 


কওমী শিক্ষাব্যবস্থার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদীসকে মাস্টার্সের (স্নাতকোত্তর ডিগ্রি) সমমর্যাদা দিয়েছে সরকার। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি সাহিত্য―এ দুই বিষয়ের মাস্টার্সের মর্যাদা পাবে দাওরায়ে হাদীস। এ-সংক্রান্ত আইনের খসড়া অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভার ১৩ আগস্ট ২০১৮ বৈঠকে এ বিলটি পাশ হয়।

২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল কওমী মাদরাসার দাওরায়ে হাদীসকে মাস্টার্স সমমর্যাদার ঘোষণা করে সরকার। ওই দিন গণভবনে আলেমদের এক অনুষ্ঠানে কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকের (বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ) চেয়ারম্যান আল্লামা শাহ আহমদ সফীর নেতৃত্বে প্রায় ৩০০ শীর্ষ কওমী আলেমের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঘোষণা দেন। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর আলোকেই এ-সংক্রান্ত আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়, কওমী মাদরাসার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে এবং দারুল উলূম দেওবন্দের মূলনীতিগুলোকে ভিত্তি করে এই সমমান দেওয়া হলো। আল্লামা শাহ আহমদ সফী দা.বা. কে সভাপতি করে স্বীকৃতি বাস্তবায়ন কমিটি গঠিত হয়।

এ কমিটি সনদবিষয়ক যাবতীয় কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী বিবেচিত হবে। কমিটির নিবন্ধিত মাদরাসাগুলোর দাওরায়ে হাদীসের সনদ মাস্টার্সের সমমান বিবেচিত হবে। এ কমিটির অধীনে ও তত্ত্বাবধানে দাওরায়ে হাদীসের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কমিটি সিলেবাস প্রণয়ন, পরীক্ষা পদ্ধতি, পরীক্ষার সময় নির্ধারণ, অভিন্ন প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়ন, ফলাফল এবং সনদ তৈরিসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এক বা একাধিক উপ-কমিটি গঠন করতে পারবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়গুলো অবহিত করবে কমিটি।

অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের বর্ষীয়ান আলেম, জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর মুহতামিম, আল হাইয়াতুল উলইয়ার সভাপতি, হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ সফী দা.বা. দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে এক সৌজন্য-সাক্ষাতে মিলিত হন। তার সাথে ছিলেন বেফাকের মহাসচিব ও জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলূম ফরিদাবাদের মুহতামিম মাওলানা আব্দুল কুদ্দুছ দা.বা. সহ একটি শক্তিশালী উলামা প্রতিনিধিদল। সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী তাদের আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, কওমী সনদের স্বীকৃতি অতি দ্রুত মন্ত্রিপরিষদে উঠবে এবং শীঘ্রই তা বিল আকারে সংসদে পাশ হবে। এ সময় আল্লামা আহমদ সফী দা. বা. টঙ্গীর আগামী তাবলীগী ইজতিমা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন। সৌজন্যমূলক অন্য কিছু বিষয়ে আলোচনার মধ্য দিয়ে সাক্ষাৎ শেষ হয়।

ইতিপূর্বে বছর খানেক আগে দেশের প্রায় ৩ শ কওমী আলেমসহ আল্লামা শাহ আহমদ সফী দা. বা. প্রধানমন্ত্রীর সাথে একই বিষয়ে গণভবনে বৈঠক করেন। তখন প্রধানমন্ত্রী মৌখিকভাবে কওমী সনদের স্বীকৃতি প্রদান করেন। এরপর সেটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়টি আইনে পরিণত করে সংসদে পাশ করার কাজ এগিয়ে চলেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব সূত্রে জানা যায়, কওমী সনদের স্বীকৃতির আইনগত রূপরেখা ইতিমধ্যেই মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে নিযুক্ত কমিটি তৈরি করে ফেলেছে। এটিই গত মন্ত্রিসভার বৈঠকে উঠল। প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ আশ্বাস থেকে বোঝা যায়, বিষয়টি বাস্তবায়িত হতে আর বেশি দেরি নেই। এককথায় কওমী মাদরাসা সনদের স্বীকৃতি এখন বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে। দেশের বিপুলসংখ্যক পরীক্ষার্থী আল হাইয়াতুল উলইয়ার তত্ত্বাবধানে দু-দুটি কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এখন রীতিমতো স্বীকৃতির সনদ হাতে পাওয়ার অপেক্ষায়। আরবী ও ইসলামিক স্টাডিজে এমএ সমমান পাওয়া এসব শিক্ষার্থী উপযুক্ত কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ ও বিদেশে এসব সনদের ব্যবহার নিশ্চিত করার চিন্তা-ভাবনা করবে এটাই স্বাভাবিক। বছরের বেশি সময় বিষয়টি ঝুলে থাকায় তাদের মনে যে দ্বিধা দেখা দিয়েছিল, হযরত আল্লামা শাহ আহমদ সফী দা. বা. এর সাম্প্রতিক সাক্ষাতে এবং মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিলটি পাশ হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মাঝে নেমে এসেছে স্বস্তির ছায়া। তারা আশা করছে অনতিবিলম্বে এটি সংসদে পাশ হয়ে আইনের রূপ নিয়ে এদেশের কওমী জগতের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় সংযোজিত করবে।

একটি বিষয় এখানে বলে রাখা খুবই প্রয়োজন যে, আল্লামা শাহ আহমদ সফী দা. বা. দেওবন্দের আদলে স্বীকৃতি চেয়েছেন। তিনি ছয় বোর্ডের সমন্বয়ে যে স্বীকৃতি বাস্তবায়ন কমিটি করে দিয়েছেন এবং অতঃপর সরকারের সাথে লিয়াজোঁ রাখার জন্য যে কমিটি করে দিয়েছেন তাতে আশা করা যায়, স্বীকৃতির ক্ষেত্রে হযরতের দাবি ও চাহিদার

1 comment: